মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি ঃ
হাবাগোবা প্রকৃতির মেয়ে নুর নাহার বেগম(৩০)। বাড়ি লামা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড বগাঝিরি গ্রামে। বর্তমানে ২ সন্তানের জননী। বড় মেয়ে শাহীন(৭) বাক প্রতিবন্ধী আর ছোট মেয়ে শানু (৫) হাবাগোবা। ২০০৪ সালে লামা পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা গোলাম কাদের ছেলে সাহাবুদ্দিনের(৩৫) সাথে বিবাহ হয়। ৬ বছর সংসার শেষে স্ত্রী ও ২ সন্তান ফেলে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় সাহাবুদ্দিন। লোক মূখে শুনা যায়, বর্তমানে কুমিল্লা শহরে দ্বিতীয় বিবাহ করে ২সন্তান ও ২য় স্ত্রী নিয়ে ঘর সংসার করছে। অভিভাবক বলতে ৭০ উর্দ্ধ বয়সের মা আনোয়ারা বেগম। নুর নাহারের আরেক ভাই প্রতিবন্ধী। অন্যের জায়গায় ঝুঁপড়ি করে বসবাস করে তার পরিবার। ৫জনের সংসারে অভাব নিত্য সঙ্গী। অন্যের ঘরে কাজ করে মা, ভাই ও ২ সন্তানের ভরণ পোষণ করত নুর নাহার। একদিকে অভাব অনটনের সংসার অপরদিকে অন্তসত্ত্বা হওয়ার কারণে কাজ কর্ম করতে পারেনা। খেয়ে না খেয়ে বিনা চিকিৎসায় মানবেতর জীবন যাপন করছে অসহায় পরিবারটি।
জীবিকার তাড়নায় কাজ করত পাশের বাড়ির আনা মিয়া সংসারে। পরিবারের সবার মূখে দু মুঠো ভাত তুলে দিতে, দিনে রাতে হাড় ভাঙ্গা খাটুনি করত নুর নাহার। আনা মিয়ার ছেলে মোঃ এরশাদ মিয়ার (৩৪) এর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে নুর নাহারের উপর। এরশাদ পূর্বেই বিবাহিত। তার ঘরে স্ত্রী সহ ৪ছেলে মেয়ে। নুর নাহারের স্বামী ৩ বছর যাবৎ এলাকায় না থাকায় এই সুযোগে নিজের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করে মোঃ এরশাদ। অবৈধ এই মেলামেশায় নুর নাহারের গর্ভে আসে আরেক সন্তান। বর্তমানে নুর নাহার ৮ মাসের অন্তসত্ত্বা। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে লোক লজ্জার ভয়ে স্থানীয় সমাধানে বসে মেয়ের পরিবার। কিন্তু নুর নাহারের গর্ভের সন্তান অস্বীকার করে ধর্ষক এরশাদ। অপরদিকে তিন বছর স্বামী এলাকায় না থাকায় বর্তমানে গর্ভের সন্তানের পিতৃ পরিচয় নিয়ে চরম সমস্যায় পড়েছে নুর নাহার। নিজেই জানেনা কে সন্তানের পিতা। কিছু দিনের মধ্যে পৃথিবীর মূখ দেখবে এই সন্তান। জারজ নামক এই ভয়ংকর শব্দের সাথে কি পরিচয় হবে তার (গর্ভের সন্তান) ? কৃতকর্মের ভয়ে ইতিমধ্যে এলাকা ছেড়েছে এরশাদ মিয়া। এবিষয়ে বিচার প্রার্থী হয়ে নুর নাহার লামা থানায় মামলা করে। লামা থানা মামলাটি আমলে নেয়।
নুর নাহারের মা আনোয়ারা বেগম অশ্রু সিক্ত কন্ঠে জানায়, বাজান দিনে এক বেলা খাবার জোটে না। পাগল পোলা, বোবা নাতিন আর পুয়াতি (গর্ভবতী) মাইয়া নিয়ে আছি বেজাই কষ্টে। টাহার অভাবে চিকিৎসা করবার পারিনা মাইয়াডার। পেডের ব্যাথায়(গর্ভকালীণ ব্যাথা) চিৎকার করে দিনে রাতে। মুখে ভাত তুইল্লা দিতে পারিনা ঔষুদ দিমু কেমনে ! কে হইবো পেডের বাইচ্ছার বাবা। আমি মাজুর মানুষ বয়স হইছে। কোনদিন মইরা যাই ঠিক নাই। কি হইবো পোলা, মাইয়া, নাতিডির। এই বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বৃদ্ধা আনোয়ারা।
মামলার তদন্তকারী অফিসার লামা থানার পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোঃ আজমগীর এই প্রতিবেদককে জানান, মামলাটি তদন্তধীন রয়েছে। অভিযুক্ত এরশাদ পালাতক থাকায় তাকে গ্রেফতার করা যাচ্ছেনা।
পাঠকের মতামত: